Friday, August 5, 2016

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আশুলিয়া ক্যাম্পাসের ছাত্রদের দ্বারা বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরন।

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আশুলিয়া ক্যাম্পাসের ছাত্রদের দ্বারা বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরন।

সকাল ৭.২৫ মিনিট । নাবিল পরিবহনের একটি বাস থেকে Uzzal Hossain স্যার সহ আমরা ৬ জন নামলাম কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলাতে। উপজেলা সদর দেখে আসলে কোনভাবেই বুঝার উপাই নেই যেঁ এই এলাকাই ভয়াবহ বন্যায় আক্রান্ত। ওইখানেই কিছুক্ষন অপেক্ষার পরপরই আমাদের টিম মেম্বার Mamun এর আব্বা ৩ টা মোটরসাইকেল নিয়ে আসলো আমাদের নিয়ে যাওয়ার জন্য। উনি এসে জানালেন যেঁ আমরা যাচ্ছি পাশের উপজেলা চিলমাড়িতে। ওই উপজেলার রানিবাজার ইউনিয়ন নাকি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। আর ওইখানেই নাকি আমরা ত্রাণ বিলি করবো।
মোটরসাইকেলে করে ৩০ মিনিট যাওয়ার পর মামুনের বাড়িতে পৌছাই। তার একটু দুরেই নাকি সেই ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাম।
উল্লেখ্য যেঁ মামুনের আব্বা হচ্ছে ওই এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য। তাই উনাকে দিয়ে আগেই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের লিস্ট করে ফেলি যাতে পরে কোন সমস্যা না হয়। এবং আমরা আগেরদিন রাতেই উনাকে দিয়ে আমাদের ত্রাণ সমগ্রি কিনে ফেলি। আমাদের কেনা ত্রাণ এর পরিমান ছিল ১ টন চাল , দেড় মণ তেল এবং দেড় মণ ডাল।
কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেয়ার পর আমরা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা দেখতে বের হই । এমন এমন দৃশ্য দেখবো তা কখনো ভাবিনি। প্রায় প্রতিটা পরিবার ই রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছে। সাথে থাকে গৃহপালিত পশুপাখি। এখানেই রান্না , এখানেই থাকা , এখানেই খাওয়াদাওয়া - এককথায় অবস্থা খুব নাজুক। এই জিনিশগুলা দেখে অনেক খারাপ লাগছিলো আর অনেকেরই সাথে কথা বলে জানতে পারলাম বাড়ি ঘরে এখনো পানি আছে হয়তো দু-একদিনের মাঝে পানি নেমে যাবে।কিন্তু সামনে একটু যাওয়ার পরই যা দেখলাম তা আমরা কেউই কল্পনাতেও ভাবতে পারিনি।তিনটা পরিবার একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেছে। তাদের বসতভিটা রাস্তা ভেঙ্গে রাস্তার সাথে নদীতে চলে গেছে। তারা এখন একটি হাই স্কুলে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের সাথে কথা বলে জানতে পারছি যেঁ " তাদের জায়গার পরিমান ছিল ছিল ৬ শতাংশ এবং এটাই তাদের একমাত্র সম্বল ছিল কিন্তু এখন এই বান্নার কবলে পরে তা নেই।
তাদের এই দুর্দশা দেখে আমরা কোনকিছু না ভেবে একটা সাহসী সিদ্ধান্ত নেই । আমরা বলে দেই তাদের কে নতুন ঘর বাঁধতে যেঁ টিন লাগবে তা আমরা দিবো। যেই কথা সেই কাজ তৎক্ষণাৎ বাজারে গিয়েই তাদের জন্য টিন কিনে আনা হয়।
আর এইদিকে আমাদের ত্রাণ দেবার কথা ছিল ১২০ পরিবার কে। কিন্তু উপজেলা প্রশাসন থেকে রিকুয়েস্ট করা হচ্ছিলো যেঁ যদি ১০ পরিবারের ত্রাণ বাড়ানো জেত তাহলে নাকি খুব ভাল হত। আমরা এই কাজটাও করি । আমরা মোট ১৩০ টা পরিবারকেই ত্রাণ দেই।
বিকেল ৩ টায় শুরু হয় ত্রাণ দেয়ার কর্মসূচী । ত্রাণ দেয়ার স্পটে গিয়ে আমরা অবাক হই যেঁ থানার এসআই , উপজেলা চেয়ারম্যান , ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সহ এলাকার প্রায় সকল ব্যক্তিবর্গ আমাদের সাহায্যের জন্য উপস্থিত ছিল।
১.৩০ ঘণ্টা চলে আমাদের ত্রাণ বিতরন কর্মসূচী। কর্মসূচী শেষ করেই আমরা বেড়িয়ে পরলাম ব্রহ্মপুত্র নদ দেখতে। ব্রহ্মপুত্র নদের চরে বিকালটা কাটিয়ে সন্ধ্যা ৮.৩০ হানিফ পরিবহণের একটি বাসে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করিলাম।
পরিশেষে আমরা ভার্সিটির প্রত্যেকটা ব্যক্তিকে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এবং বন্ধু মামুনের আব্বাকে কীভাবে ধন্যবাদ জানাবো তা হয়তো আমাদের টিম এর প্রত্যেকটা মেম্বার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। তারপরেও বলছি আঙ্কেল আপানকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আমাদের কাজকর্মের কিছু ভিডিও লিঙ্ক নিম্নে দেয়া হল। 

 

https://youtu.be/jzmAd4YP0qw

By Sarker M Shajib